আশিকুর রহমান, বাকৃবি: ভেটেরিনারি পেশা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নয়জন প্রাক্তন শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (বিএসভিইআর) এর আয়োজনে ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রথিতযশা ভেটেরিনারিয়ানদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। গত ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষকগণ হলেন- প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোতাহার হোসেন মন্ডল, সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঈনুদ্দীন, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস ও অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাকী, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ ও অধ্যাপক ড. মনোজ মোহন সেন এবং এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম ও অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বাকৃবির মাইক্রোবায়োরজি এন্ড হাইহিজন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে বার্ষিক লেকচার এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
বিএসভিইআরের সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষরে ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশের টিম লিডার অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসাইন এবং ইন্টার এগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ কে এম খশরুজ্জামান। এছাড়া বিএসভিইআরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুনসহ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী গবেষকগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঘানায় নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সিনিয়র অ্যানিমেল প্রোডাকশন অ্যান্ড হেলথ অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুদ্দিন বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় ২০৫০ সালে প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯, নিপাহ, লাম্ফি স্কিন ডিজিজসহ বিভিন্ন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তরণের জন্য পরিবেশবান্ধব কৃষি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ খাদ্য নীতি বাস্তবায়ন, জলবায়ু অভিযোজনসহ কৃষকদের জন্য ভর্তুকি ও সরকারি সহায়তা জরুরি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণিসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পশুখাদ্যের গুণগতমান কমছে, পশুর উৎপাদনশীলতা কমছে। পাশাপাশি দূষণ ও অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
‘প্রাণীর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের সম্মেলনে বাকৃবি ছাড়াও দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশি বিদেশি প্রায় ৫০০ ভেটেরিনারিয়ান অংশ নেন।
সম্মেলনের প্রথম দিন সেমিনার, প্লেনারি সেশনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয় দিন রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ১২ টি টেকনিক্যাল সেশনে গবেষণামূলক ৯০টি মৌখিক এবং ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্য থেকে সেরা পোস্টার উপস্থাপনায় ছয়টি এবং সেরা মৌখিক উপস্থাপনায় ১২ টি পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি পেশার দায়িত্বও বেড়েছে। গুণগত মানের দিকে নজর রেখে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিজ্ঞানের যে গবেষণালব্ধ জ্ঞান সরাসরি কৃষকের মাঠে প্রয়োগ করা যায়, সেগুলো যেন কেবল বইয়ের পাতায় বন্দী না থাকে। যত দ্রুত মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে যাবে, তবেই গবেষণার সাফল্য অর্জিত হবে। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রচলিত কাঠামো ও কারিকুলাম সময়ের সাথে পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিএসভিইআর নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ, যথেষ্ট সময় ও অর্থ ব্যয় করে এত সুন্দর আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এত বড় বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানাই এবং বিএসভিইআরের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বিশ্বেই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গতানুগতিক পড়াশোনা, গবেষণা করলে আর চলবে না। সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ও গবেষণার দিকে মনোযোগী হতে হবে। শুধু প্রাণিজ উৎপাদনের দিকে নজর দিলেই হবে, উৎপাদনের পাশাপাশি প্রাণি স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে কোন লাভ হবে না। এবছরের সম্মেলনটি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী। একজন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট সবসময় সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে অন্য চাকরির মাধ্যমে যেন নিজের জীবনকে আলোকিত করতে পারবে, সেজন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।’
কৃষিবিদ আশিকুর রহমান
বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়