সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় যে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ)।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন আয়োজিত আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) এর পক্ষ থেকে সংবাদ সন্মেলনে বলা হয় ,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিতর্কিত, নজিরবিহীন ও দেশবিরোধী বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় যে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এটি কতখানি কল্যাণকর ও প্রয়োজন তা দেশবাসীর জানা প্রয়োজন। সাধারণত যে কোন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণের সাথে মতবিনিময় ও আলোচনাক্রমে আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রাণিসম্পদ সেক্টরে বিদ্যমান আইন সমূহ প্রণয়নের ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান কারিগরী সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারগণের সাথে আলোচনা করে আইনের খসড়া প্রস্তুত হওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপরে মন্ত্রণালয়ে অধিকতর যাচাই বাচাইয়ের জন্য একাধিক আভ্যন্তরিণ সভা হয়ে থাকে।সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মত বিনিময় ছাড়া সরকারের স্বীকৃত সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে কঠোর গোপনীয়ভাবে ১৮ ডিসেম্বর ।আইনটি প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন নামে কোন আইনের অস্তিত্ব পৃথিবীর কোন দেশে নেই।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জাপান, ভারত, শ্রীলংকা সহ পৃথিবীর সকল দেশের মত প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন, উৎপাদন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য, সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা, প্রানিজাত পণ্যের উৎপাদন সহ সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রণ ১৯৮২ সাল থেকে বিদ্যমান বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে।কাজেই নতুন করে এ সংক্রান্ত কোন আইন প্রণয়ন নি:সন্দেহে বিভ্রান্তিকর ও জনস্বার্থবিরোধী।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব অবসর গ্রহণের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রের সকল রীতিনীতি ভঙ্গ করে বর্ণিত বিতর্কিত বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের হীণ উদ্দেশ্য গ্রহণ করেন। আমরা তাঁর এ হীণ উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিবৃত্ত তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর কলকাতার বেলগাছিয়া বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ কুমিল্লা ভেটেরিনারি কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্র্তীতে ১৯৫১ ও ৫২ সালের দিকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ কৃষি কলেজে ভেটেরিনারি শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভেটেরিনারি শিক্ষার উপর সমন্বিত ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। অত:পর DEANSHIP দ্বন্দে ভেটেরিনারি অনুষদ ভেঙ্গে ১৯৬৩ সালের দিকে অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।প্রাণিসম্পদের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে ১৯৮২ সালে ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক এর নেতৃত্বাধীন এনাম কমিটি, ৮০’র দশকের শেষের দিকে অধ্যাপক শামসুল হক এর নেতৃত্বাধীন শামসুল হক কমিটি এবং ৯০’র দশকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইরশাদুল হক এর নেতৃত্বাধীন ইরশাদুল হক কমিটি সংস্লিষ্ট শিক্ষাবিদ ও স্টেকহোল্ডার গণের সাথে ব্যাপক মতবিনিময় শেষে ভেটেরিনারি শিক্ষার উপর সমন্বিত কারিকুলাম পূন:চালুর সুপারিশ করেন।
তারা বলেন, বর্তমানে দেশে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমন্বিত (Combined) কারিকুলামে ডিভিএম/বি.এস.সি ইন ভেট সায়েন্স এ্যান্ড এএইচ ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। একই কর্মক্ষেত্রে একই বিষয়ে (প্রাণিসম্পদ) দু’ধরনের গ্রাজুয়েটের পরামর্শ প্রদান/দায়িত্বপালনে মনস্তাত্বিক বিরোধে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ, ফলে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে প্রাণিসম্পদের সামগ্রিক উন্নয়ন। এ প্রেক্ষাপটে দু’ধরণের গ্র্যাজুয়েটগণের মনস্তাত্তিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ এর মধ্যস্থতায় সাবেক এম.পি কৃষিবিদ জনাব আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম এর উপস্থিতিতে বিসিএস লাইভস্টক এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) ও বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ দীর্ঘ আলোচনার পর সমঝোতায় পৌঁছান। বিরোধ নিষ্পত্তির সমঝোতা মূলক প্রস্তাব প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়। ঐ সময়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব কাজী ওয়াসি উদ্দিন কে আহবায়ক করে ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি উভয়ধরণের গ্রাজুয়েটের সমন্বয়ে ০১ টি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি কয়েকটি সভা করে।দু’ধরনের গ্র্যাজুয়েটগণ এর মধ্যের বিরোধ মীমাংসার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রির সচিব ড. নাহিদ রশিদ তাঁর ভেনেটি ব্যাগ থেকে চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর কার্বন কপি বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ মন্ত্রণালয়ের সভায় উপস্থাপন পূর্বক আইন প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গ্র্যাজুয়েটগণের মধ্যের সংঘাত ও বিরোধ আরও উস্কে দিলেন। এতে বাঁধাগ্রস্থ হবে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন, ক্ষতিগ্রস্থ হবে জনগণ।
সংবাদ সন্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন । একইসাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদের অপসারণ দাবি করেছেন এবং ড. নাহিদ রশীদের অবসরোত্তর বিচার দাবি করেছেন।
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) এর মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, উপস্থিত ছিলেন বিভিএ'র সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাযার্চ প্রফেসর ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) এর সভাপতি ড. মঞ্জুর কাদের, ডিএলএস এর সাবেক মহাপরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শহিদুল ইসলাম সহ ১৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন মহোদয়গণ সহ সিনিয়র ভেটেরিনারিয়ানগণ।