বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৯ শতাংশ যার পরিমাণ দাড়ায় ৬৭ হাজার কোটি টাকারও বেশী। উল্লেখ্য, এখাতে প্রবৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ। কৃষি প্রধান অর্থনীতির মোট কৃষিখাতের প্রায় ১৭ ভাগ অবদান প্রাণিসম্পদের। যার ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত তাঁর লক্ষ্য “সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ”-এ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।
“উদাহরণস্বরূপ, স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন, ৫ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ১৫০ কোটি যা পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে প্রায় ১৩১ লক্ষ মেট্রিক টন, ৯৩ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ২৩৩৫ কোটিতে।”
বর্তমানে, বাংলাদেশের মাংস ও ডিম উৎপাদন উদ্বৃত্ত। মাথাপিছু বার্ষিক ১০৪টি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৩৬টি এবং দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ১৪৭ গ্রাম। উদ্বৃত্তাংশ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বা বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার যা কিউসি ল্যাব নামে পরিচিত। প্রাণিসম্পদের অন্যতম একটি অবদান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আযহায় কুরবানির প্রাণী সরবরাহেও স্বয়ংস্বম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ১০ মে ২০২৩ তারিখে কুরবানি উপলক্ষে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অবৈধ প্রাণী প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই অর্জন আমাদেরকে জাতি হিসেবে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং আরও সামনে এগিয়ে যাবার সাহস যুগিয়েছে। তবে, আমাদের এই উৎপাদনের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাতকে টেকসইকরণ অত্যন্ত জরুরী। সে লক্ষ্যে, কিছু বিষয় আমাদের চৌকষভাবে বিবেচনা করতে হবে।
১। টেকসইকরণঃ অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক
একটি খামার টেকসই হতে হলে অবশ্যই তাকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে হবে। মুনাফার পথে অন্যতম বাধা হচ্ছে রোগ-বালাই এবং এর প্রধান শিকার নিম্ন আয়ের দেশগুলো। যেমন, অক্সফোর্ড এনালাইটিকার গবেষণা মতে, নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে রোগের কারণে ২২% উৎপাদন কমে যায়। কেনিয়ায় একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র কৃমিনাশক যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে খামার প্রতি বার্ষিক আয় বেড়েছে ১,২৪৮ মার্কিন ডলার। বিশ্বের অন্যতম মাংস উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলে প্রতি ১% টিকা প্রয়োগ বৃদ্ধিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৭%। খামারকে রোগ-বালাই শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, বরং গ্রীণ হাউজ গ্যাস (GHG) বৃদ্ধি ও অধিক ভূমি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। একটি খামারে যদি ২০% গরু কোন রোগে আক্রান্ত হয় তবে নিম্ন আয়ের দেশের ক্ষেত্রে ৬০% এবং উচ্চ আয়ের দেশের ক্ষেত্রে ৪২% GHG উৎপাদন বেড়ে যায় (Health for Animals)। প্রাণি রোগাক্রান্ত হলে আইসোলেশন (পৃথকীকরণ) ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য কাজে অধিক জায়গা ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও, প্রাণিসম্পদ সামাজিক অবস্থাকে টেকসইকরণের অপরিহার্য একটি অনুষঙ্গ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে ২% এবং ২০১৯ সালে ৫% ক্ষুধার সাথে জড়িত ছিল পোল্ট্রির রোগ-বালাই। আমাদের এই সামগ্রিক টেকসইকরণ অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে, পরিবেশগত ও সামাজিকভাবে টেশসইকরণ করতে হলে প্রাণির সঠিক খাদ্য ব্যাবস্থাপনা, রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, কৃমিদমন এবং উন্নত জেনেটিক্সের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
২। ট্রান্সবাউন্ডারি এনিমেল ডিজিস (TADs) নিয়ন্ত্রণ।
রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কৌশল হল জীবাণুর অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। বিশেষ করে, আন্তঃদেশীয় সীমানা অতিক্রম করে সংক্রমণ যোগ্যরোগ-যেগুলোকে ট্রান্সবাউন্ডারি এনিমেল ডিজিস বলা হয়-সম্পর্কে সচেতন থাকা। কারণ, এই রোগগুলো সহজেই ছড়িয়ে পরে, মৃত্যুহার বেশী, অর্থনৈতিক প্রভাব প্রকট, খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিবন্ধক এবং নির্মূলের ক্ষেত্রে একাধিক দেশের বহুমাত্রিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার Emergency Prevention System for Animal Health মোট ১৪টি রোগকে এই তালিকাভুক্ত করেছেঃ ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, কন্টাজিয়াসবোভাইনপ্লিউরোনিউমোনিয়া, ছাগলের বসন্ত, ভেড়ার বসন্ত, পিপিআর, হাইলিপেথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, Rift ভেলী ফিভার, রাণিক্ষেত, আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার, ক্লাসিক্যাল সোয়াইন ফিভার, ইকুইন এনসেফালোপেথি, জলাতঙ্ক এবং ব্রুসেলোসিস। বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার অধীনে ২০১৬ সালে পরিচালিত Joint External Evaluation -এর প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশ জররুী ব্যবস্থা গ্রহণে ৫ এর মধ্যে মাত্র ১.২৫ পেয়েছে যেটি আমাদের অপর্যাপ্ততার নির্দেশক। সেজন্যেই, TADs-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং করা ও প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরী। এমনকি, আমাদের করোনার মত অতিমারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যথাসম্ভব প্রস্তুতি থাকা উচিৎ।
৩। বীমা
প্রাণি লালন-পালনের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা যেমন একদিকে জরুরী তেমনি অন্যদিকে প্রয়োজন সাপেক্ষে আমাদেরকে বিকল্প উপায় রাখতে হবে। কারণ, যত উন্নত ব্যবস্থাই করি না কেন, রোগ, মহামারি বা দুর্যোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রাণিসম্পদের উদ্যোক্তা বা মূল ¯্রােতটির সিংহ ভাগই নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। তড়কা বা হাইলিপেথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার মত কোন মহামারী বা অন্য কোন দুর্ঘটনায় খামারিকে যাতে পথে বসতে না হয় সেটি আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বীমা একটি টেকসই সমাধান বলে আমরা মনে করি। আশাব্যঞ্জক কথা হচ্ছে, ইতোমধ্যে প্রাণির জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু হয়েছে যা মূলত বেসরকারিভাবে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত সময়ে সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নিদির্ষ্ট কিছু রোগ বিশেষ করে জুনোটিক রোগে (মানুষ-প্রাণি উভয় সংক্রামক) মৃত প্রাণির বিপরীতে খামারির জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলেও বীমা অর্থে বা নামে ব্যাপকভাবে চালু হয় নি। বেসরকারিভাবে প্রাণিসেবা ভেট IPKSF-এর আওতায় কিছু NGO কর্তৃক চালুকৃত বীমাগুলো বিশ্লেষণ করে সরকার নিজ উদ্যোগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে চালু করতে পারে অথবা বেসরকারি খাতগুলোকে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। বীমাব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চয়তা বা আশ্বস্থতা টনিক হিসেবে কাজ করবে যাতে প্রাণিসম্পদের সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাগণ বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন এবং নির্ভয়ে খামার চালাতে পারবেন।
৪। কাঁচা ঘাসসহ অন্যান্য প্রাণি খাদ্য এবং ভূর্তুকি
বর্তমানে প্রাণি খামার স্থাপনের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে কাঁচাঘাসের দুষ্প্রাপ্যতা এবং দানাদার খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ক্রমান্বয়ে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় ঘাস চাষের জন্য উপযুক্ত জমির অভাব। অন্যদিকে, দানাদার খাদ্যের যে বাজারদর তাতে নিদির্ষ্ট মেয়াদে প্রাণি লালন-পালন করে লাভের পরিমাণ একেবারেই ন্যূনতম। তবে, খুশির ব্যাপার হচ্ছে, উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল ঘাসগুলো এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে এবং এখাতটি বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি
হাসপাতাল থেকে তাদের নিয়মিত ঘাসের কাটিং সরবরাহ, প্রশিক্ষণ, বাজারজাতকরণে নীতিগত সহায়তা করলে এই জায়গাটি বিস্ফোরণের মত সম্প্রসারিত হতে পারে। দানাদার খাদ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ দ্রব্যাদির কাঁচামালের কর এবং ভ্যাটের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিলে খাদ্য মূল্য কমাতে কিছুটা সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে, ভূর্তুকি একটি সাময়িক বিকল্প হতে পারে। যেমন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ভূর্তুকির প্রাথমিক প্রাক্কলন ব্যয় ছিল ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এই ভূর্তুকির আনুপাতিক অংশ যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের খামারিদের খাদ্য মূল্য নাগালের মধ্যে রাখার স্বার্থে ব্যয় করা হয় তবে তা প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, খামারগুলোতে যে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করা হয় তা যদি কৃষি সংযোগের মত স্বল্প মূল্যের সংযোগ দেয়া হয় তবে তা উৎপাদন ব্যয় কিছুটা হ্রাস করবে।
৫। দুধ উৎপাদন ও মার্কেট চেইন
প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দুধ। মাংস ও ডিমে আমাদের উৎপাদন উদ্বৃত্ত হলেও দুধে কিছুটা পিছিয়ে। দৈনিক মাথাপিছু ২৫০ মিলি দুধের চাহিদার বিপরীতে গত অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২০৯ মিলি। মাস্টাইটিসসহ অন্যান্য রোগবালাই এবং প্রাণিখাদ্যের অপ্রতুলতা এখাতটিকে বেশ নাজুক অবস্থানে নিয়ে গেছে। সাথে যোগ হয়েছে, বাজার ব্যবস্থার নৈরাজ্য। বাংলাদেশ একটি তুলনামূলক ছোট দেশ হলেও বাজারদরের পার্থক্য আকাশ পাতাল। একই সময়ে কোথাও দুধের দাম ৮০ টাকা, কোথাও ৪০ টাকা। আবার, একইস্থানে একদিন ৭০ টাকা ত অন্যদিন ৫০ টাকা। এই অস্থিতিশীল বাজার ডেইরী খামারীদেরকেও অস্থিতিশীল করে রাখে। দুধ সহজে পচনযোগ্য হওয়ায় বাজারদরের পার্থক্য অনেক বেশী। এক্ষেত্রে মার্কেট ভেল্যু চেইন তৈরি করা প্রয়োজন। চিলিং সেন্টার স্থাপন করে দুধ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধজাত পণ্যের শিল্পায়ন এবং ভোক্তা পর্যায়ে সর্বস্তরে সহজে পৌঁছানোর টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে লাইভষ্টক ও ডেইরী উন্নয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দায়িত্বগুলো গুরুত্বের সাথেই পালন করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি ও বেসরকারি বহুমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুতই দুধের জাতীয় চাহিদা অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব হবে।
প্রাণিসম্পদ খাতটি একদিকে যেমন উৎপাদনমুখী ও লাভজনক অন্যদিকে তেমনি সংবেদনশীল ও ভঙ্গুর। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের একই সাথে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার রোধে যথাযথ জৈবনিরাপত্তা ও টিকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ট্রান্সবাউন্ডারি এনিমেল ডিজিস (TADs) নিয়ন্ত্রণ করতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সনদ, গবেষণাগারে পরীক্ষার প্রতিবেদন, বন্দরগুলোতে আইসোলেশন এবং সম্পৃক্ত দেশগুলোর আনুপাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে নিজস্ব ও সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে। এটি রোগাক্রান্ত, গর্ভবতী ও বাচ্চাসহ সকল প্রাণির তদারকির মাধ্যমে ক্ষতি কমিয়ে আয় বৃদ্ধি করবে। প্রাণিকে সঠিক সময়ে নিয়মিত কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে ও বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বীমা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও প্রয়োগ করতে হবে। ডেনরী খামারকে লাভজনক করতে হলে প্রতিষ্ঠার আগেই খামারীকে কাঁচাঘাস ও দানাদার সুষম খাদ্যের সরবরাহের পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। দুধ উৎপাদনে কমপক্ষে আমাদের নিজস্ব চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবে মেটানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গস্খহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সার্বিকভাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সরবরাহ, সরকারি দপ্তরসমূহ আইন ও বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রণোদনা ও ভুর্তুকি প্রদান, ঔষধ ও প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদন ও আমদানিকারক কোম্পানিগুলো মানসম্পন্ন ঔষধ ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ, ফিড মিলগুলো ন্যায্যমূল্যে উন্নত প্রাণি খাদ্য সরবরাহ, প্রাণিসম্পদের পেশাজীবী সংগঠনগুলো নীতিগত সমর্থন ও সরকারের সাথে কাউন্সেলিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং উদ্যোক্তাগণ সৃজনশীল ও সাহসী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এইখাতটিকে টেশসইকরণ করা সম্ভব। ফলশ্রুতিতে, আমরা “সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ” করতে পারব।
লেখকঃ
ভেটেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫।
সংযুক্তিঃ সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ-৬৭৪০।
ফোনঃ ০১৭১০০৫৪৭৭৫, ইমেইলঃ ধ.ধিৎবং.নধঁ@মসধরষ.পড়স