পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

প্রায় শতভাগ আমদানি-নির্ভরতা, পুঁজির স্বল্পতা, পোল্ট্রি মুরগি ও ডিম সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা এবং চরম অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের পথচলা। আজ আমাদের চাহিদার শতভাগ ডিম, মুরগি, ফিড, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা- সবকিছুই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ‘ফিড ইন্ডাষ্ট্রি’, ‘মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারি হ্যাচারি’ ও ‘বাণিজ্যিক খামার’ গড়ে না উঠলে এ অর্জন ছিল কল্পনাতীত। বিগত ৫৩ বছর অসংখ্য খামারি-উদ্যোক্তার অক্লান্ত পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে তোলা এ শিল্পকে নিয়ে একটি মহল ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অত্যন্ত সুকৌশলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে, বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে এ খাতটিকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি এনে দাঁড় করানো হয়েছে। এরাই তারা, যারা বিগত স্বৈরাচারি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রোপাগান্ডা চালিয়ে, ‘খামারিদের বন্ধু’ তকমা গায়ে এঁটে, খামারি ও উদ্যোক্তাদের লোকসানে ফেলে- একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিলে কাজ করেছে। এদের কারণেই বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে প্রচুর মুরগির খামার, ফিড মিল ও হ্যাচারি বন্ধ হয়েছে; অসংখ্য খামারি ও উদ্যোক্তা ঋণের দায়ে নিঃস্ব হয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাঁরা ভোল পাল্টে আবারও নতুন নীল নকশা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। তারা বিগত সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা লোপাটের গল্প ফেঁদেছিল; ক’দিন আগে আবারও ৫,৯২০ কোটি টাকা লোপাটের কল্পকাহিনী প্রচার করেছে। বাস্তবে এরা ডিম-মুরগি-ফিডের উৎপাদনকারী নয় বরং সুবিধাবাদী, মধ্যস্বত্ত¡ভোগী ও মুনাফাখোর। এদের সম্পর্কে সতর্ক না হলে, তারা দেশ ও দেশীয় শিল্পের আরও বড় ক্ষতি করবে।  

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, কাঁচামালের সংকট, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, জ¦ালানী তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি, বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রিতা, বিলম্ব মাশুল ইত্যাদি কারণে ফিড মিলগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভারতে ফিডের দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণ ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত প্রায় সব উপকরণ তাঁদের দেশেই উৎপাদিত হয়। ভারতের স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ভ‚ট্টার দাম যেখানে ২৭-২৯ টাকা এবং সয়াবিন মিলের ৫৮-৬০ টাকা; সেখানে বাংলাদেশে তা যথাক্রমে ৩৪ টাকা ও ৬৬ টাকা। শুধু তাই নয়, ভারত যেখানে কাঁচামাল রপ্তানি করে; সেখানে আমরা তাঁদের কাছ থেকেই আমদানি করি। কিন্তু তারপরও ভারত থেকে এক বস্তা ফিডও বাংলাদেশে আমদানি হয়না বরং বাংলাদেশের ফিড ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। তাই ভিনদেশী এজেন্টরা যখন প্রতি কেজি ফিডে ১৫-২০ টাকা এবং প্রতিটি মুরগির বাচ্চায় ৪১-৯১ টাকা মুনাফার কথা বলে তখন আমরা অস্বস্তি বোধ করি, বিব্রত হই। বাস্তবতা হচ্ছে- গতকালও উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হয়েছে গড়ে মাত্র ২৮-৩০ টাকায়; বিগত তিন মাসে যার গড় মূল্য ছিল ৩২-৩৫ টাকা। শুধু তাই নয়, বিগত ৬ মাসে ফিডের দাম এক পয়সাও বাড়েনি।

‘করপোরেট খামারি’ ও ‘সিন্ডিকেট’ এর ধোঁয়া তুলে মুখোশধারী এজেন্টরা যে অপপ্রচার শুরু করেছে তাতে যদি আবারও খামারি ও উদ্যোক্তারা লোকসানে পড়েন, উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি হয় তবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তারা যে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে, তা সফল হবে। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। ফিড ও বাচ্চার উৎপাদন খরচ কত তা সংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধান করার এবং দেশীয় পোল্ট্রি ও ফিড শিল্পকে জাতির স্বার্থে চক্রান্তকারীদের হাত থেকে রক্ষার আহŸান জানাই। বর্তমান সংকট কাটাতে হবে; উৎপাদন খরচ কমাতে হবে; ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা নতুন সরকারের সাথে কাজ শুরু করেছি। তাই সরকারসহ সকল দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।
?>