ফিসটেক লিমিটেড কর্তৃক Tilapia Revolution in Bangladesh শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেলাপিয়া মাছ l আমাদের দেশের মোট চাষযোগ্য মাছের মধ্যে তেলাপিয়া দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে l সকল বাজারেও তেলাপিয়ার আধিক্য নিয়মিত পরিলক্ষিত । বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমজীবী প্রতিটি মানুষের মাছ ক্রয় করার মত সামর্থ্য আছে যা সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্ধিত প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে। এই মাছের যোগানের পেছনে ফিসটেক এবং বেসরকারি সকল কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। উল্লেখ্য, কৃষি সেক্টর থেকে সরকারের আয়ের প্রায় ২৩ শতাংশ আসে মাছ থেকে।

মৎস্য সেক্টরের এই ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে এবং মৎস্য সপ্তাহ ২০২৩ এর সহযোগী কার্যক্রম হিসেবে ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক  খ. মাহবুবুল হক। ২৯ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত হোয়াইট প্যালেস কনভেনশন হলে উক্ত সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও মৎস্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক আরো বলেন, বর্তমানে সকল চাষযোগ্য মাছের দাম একটি যৌক্তিক পর্যায়ের আছে এবং কেউ যদি বলে মাছ বিক্রি করে লাভ হয় না, তবে সেটি সঠিক নয়। মাছ চাষ বর্তমানে একটি সম্মানজনক পেশা। যে লোকটি মাছ চাষ করে সে এখন ও করে বলে, আমি মাছ চাষী। মাছ চাষে বিপ্লবের পেছনে দেশের মিডিয়া গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও তিনি উল্লেখ্য করেন।

মাহবুবুল হক বলেন, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে আমরা চতুর্থ স্থানে আছি। কিন্তু বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে কম্প্লায়েন্স। দেশের বাইরে তেলাপিয়ার মাছের অনেক আরো একটি বাজার আছে। কিন্তু সেজন্য আমাদের কম্প্লায়েন্স মানতে হবে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মাছ তৈরি করতে হবে। টেকনোলজি যদি আমরা গ্রহণ না করি এবং বিদেশে রপ্তানি যোগ্য তেলাপিয়া তৈরি করতে না পারি ; তবে মাছ উৎপাদনের যে গ্রোথ রয়েছে, তাতে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা ঝুঁকিতে পড়ে যাব। আমরা এই কম্প্লায়েন্স এর ব্যাপারে এখন অধিক মনোযোগ দিচ্ছি এবং রপ্তানি যোগ্য তেলাপিয়া উৎপাদনের জন্য কাজ করছি।

তিনি আরও যোগ করেন, দেশে ২৫ লাখ মৎস্য খামারের মধ্যে ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ খামারকে আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনতে পেরেছি। ২০৪১ সনের মধ্যে আমরা ৮৫ লাখ মে. টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। ২০২৫ সনের মধ্যে মাছ রপ্তানি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। শুধু চিংড়ি দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না, সেখানে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস এবং অন্যান্য মাছের ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে। সেজন্য ক্রেতাদের (দেশ-বিদেশের) চাহিদানুযায়ী এবং আইন মেনে খামারিদের মাছ উৎপাদন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুসদের ডীন অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের উপযোগী করে আমার দেশের মাছের জাত  তৈরি করতে হবে। সেটি না হলে আবহাওয়া জনিত সমস্যার কারণে বিদেশি জাতগুলো অনেক সময় টিকে থাকতে পারে না। ফিসটেক বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এবং দেশে শক্ত একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, ফিসটেক নিজেরাই একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে যা আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুযায়ী মাছের বিভিন্ন উদ্ভাবন করবে। কারণ, সারা বিশ্বে গবেষণার ক্ষেত্রে যত উন্নয়ন সেগুলোর অধিকাংশই বেসরকারি কোম্পানির অবদান। এ ধরনের গবেষণা কাজে  আমাদের মত গবেষকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা সেটি করবো।

ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড এর পরিচালক আতাউল করিম ভুইয়া বলেন, আমরা ফিসটেক যে কোনো যৌক্তিক সব সময় ডিজি মহোদয় সহযোগিতা পেয়ে আসছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্প্রিং জেনেটিক্স এর যে তেলাপিয়ার জাত নিয়ে আমরা কাজ করছি, সেখানে মৎস্য অধিদপ্তরের বড় অবদান রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে আমেরিকান ব্রিড নিয়ে আগে কখনো কাজ হয়নি। অধিদপ্তর অনেক যাচাই, বাছাই, পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জাতটির অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন আমাদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। এজন্যই গুণগত মানসম্পন্ন এবং দ্রুত বর্ধনশীল তেলাপিয়া আমরা খামারিদের আছে পৌঁছাতে পারছি নিয়মিত।

ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান খন্দকার ফরহাদ হোসেন বলেন, আজ থেকে অন্তত ২০ বছর আগে ফিসটেক যখন কার্যক্রম শুরু করে তখন মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়, যা বর্তমানে অনেকাংশেই কেটে গেছে। তেলাপিয়া মাছ বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদার পূরণের অন্যতম একটি উৎসব হিসেবে পরিচিত। মাছের জাত উন্নয়ন ও গবেষণায় যদি কেউ মনে করেন আমাদের সহযোগিতা দরকার, সেটির জন্য অবশ্যই আমরা প্রস্তুত আছি এবং আমাদের গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগ এই ধরনের কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে।

সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিং জেনেটিক্স ( Spring Genetics) থেকে আগত Mr. Hideyoshi Segovia Uno ও Carloz V. Lopez, দুজন বিশেষজ্ঞ তেলাপিয়ার সিলেক্টিভ ব্রিডিং এবং ফার্ম ম্যানেজমেন্টের ওপর তাদের টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এছাড়াও Spring Genetics Tilapia Farming Experience in Bangladesh শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন মিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ) মো. আরিফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের পরিচালক (গবেষণা ও প্রকাশনা) মো. নুরুজ্জামান, পিএইচডি। ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তারেক সরকার এছাড়াও গাজীপুর, কক্সবাজার ও নরসিংদী থেকে আগত খামারিগন বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের জেনেটিক্স কোম্পানি স্প্রিং জেনেটিক্স (বেঞ্চমার্কের প্রতিষ্ঠান) থেকে সরাসরি উচ্চ উৎপাদনশীল তেলাপিয়ার ব্রুড নিয়ে আসে ফিসটেক হ্যাচারি মিনিটেড; যেটির পোনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বর্তমানে চাষ হচ্ছে। ফিসটেক তেলাপিয়া পোনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এটি বর্ধনশীল, উৎপাদিত পোনা প্রায় শতভাগ মনসেক্স (পুরুষ) এবং প্রতি বছরই আপডেট জেনারেশনের ব্রুড সংগ্রহ করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায় সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার। গুণগত পানসম্পন্ন তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন এবং বিপণনের স্বীকৃতি স্বরূপ ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেড অর্জন করেছে জাতীয় মৎস্য পদক -২০২২।

?>