মুরগির লিটার ব্যবস্থাপনা


মুরগির আরামদায়ক বিছানাকে বলা হয় লিটার । আমাদের দেশে প্রচলিত কিছু লিটার ঃ
ত’ষ, কাঠের গুড়ো, শুকনো আখের ছোবড়া, বালু। এদের মধ্যে সর্ব উত্তম হলো তুষ। কাঠের গুড়া ব্যবহার করলে মুরগির ব্রæডার নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সে ক্ষেত্রে কাঠের গুড়ার সাথে চূর্ণ করা তুঁতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বালু ব্যবহার করলে ন্যাকরোটিক এন্টারাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আমাদের দেশে দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় বালুর প্রচলন আছে। বিশেষ করে খুলনা সাতক্ষীরা এবং যশোর এলাকায়। আমাদের দেশে ৮০% খামারি তুষকে লিটার হিসেবে ব্যবহার করে। শীতকালে সাধারণত তুষ ৪ ইঞ্চি পুরা দিতে হয়, গরমকালে দুই ইঞ্চি হলেই চলে।

ভালো লিটারের বৈশিষ্ট্য ঃ

১) শুকনো-ঝরঝরে হতে হবে।
২) কোনরকম গন্ধ বা জীবাণু থাকা যাবে না।
৩) পানির শোষণ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে।
৪) সহজলভ্য হতে হবে।
৫) দাম তুলনামূলকভাবে কম হতে হবে।

লিটারের আদ্রতা ২০ থেকে ২৫ পার্সেন্ট হতে হবে, এর মধ্যে না হলে বাচ্চা মুরগির শরীর থেকে লিটার পানি চুষে নিবে এবং বাচ্চা পানি শূন্যতায় ভুগবে। লিটার বেশি ভেজা হলে মুরগির ফার্মে আমাশয় ও এবং অ্যামোনিয়ার সমস্যা দেখা দিবে। বেশি শুকনা থাকলে ধুলাবালি উড়ে গিয়ে শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিবে। সাধারণত ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে দিনে দুইবার লিটার বদলাতে হয়। সেড থেকে লিটার নিয়ে হাতে মুষ্টি করলে যদি জমাট না বাদে এবং ঝুরঝুরে থাকে তাহলে এটা ভালো লিটার। এক থেকে দেড় ফিট উপর থেকে লিটার ফেলে দিলে যদি জমাট বাধা থাকে তাহলে সেটা খারাপ লেটার এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটা বদলে ফেলতে হবে। লিটারে পানি পড়লে পানি যুক্ত লিটার ফেলে দিয়ে সমপরিমাণ নতুন  লিটার যোগ করতে হবে। লিটার একবারে বদলানো যাবে না ২০-২৫% লিটার রেখে দিতে হবে। সাধারণত পুরাতন লিটারের সাথে নতুন লিটার মিশিয়ে জায়গা পরিবর্তন করতে হবে। নতুন জায়গায় সম্পূর্ণ নতুন লিটার দেওয়া যাবে না, নতুন লিটার মুরগি আছে চোখে নাকে ক্ষত সৃষ্টি করে। সম্পূর্ণ নতুন লিটার দিলে মুরগির আমাশা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সুতরাং কখনো পুরো লিটার বদলানো যাবে না। লিটার ভিজে গেলে অথবা আদ্রতা বেড়ে গেলে চূর্ণ করার চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর ফলে লিটারের অ্যাসিডিটি কমে যে অ্যালকালিটি  বাড়বে। সাধারণত দুপুর বেলায় লিটার বদলানো যাবে না, কারণ এই সময় লিটার বদলে রুমের তাপমাত্রা বেড়ে যায়-তবে শীতকালে এটা করা যেতে পারে। লিটার বদলানোর উত্তম সময় হলো খাবার এবং পানি দেওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা পর। উত্তম লিটারের পিএইচ ৫ থেকে ৭। মুরগির বয়সের প্রথম থেকে তিন দিন ব্রæডিং এর সময় লিটারের উপর ১০ থেকে ১২ পিস পেপার দিতে হবে। প্রতিদিন দুই তিনটা পেপার উপর থেকে ফেলে দিতে হবে এবং আগুনে পোড়াতে হবে। অনেক সময় পেপারের উপর পানি পড়ে গেলে সে পেপারটি ফেলে দিয়ে নতুন পেপার দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে প্রথম তিনদিন পেপার যেন না ভিজে সাথে সাথে লিটার যেন না ভেজে।

ভেন্টিলেশন ঃ
ঘরের এমোনিয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বের করে দেওয়ার জন্য উপরের দিকে এক থেকে দেড় ফুট ফাঁকা জায়গায় রেখে পর্দা দিতে হবে। পর্দা হিসেবে পলিথিন ব্যবহার করা অনুচিত, চেয়ে ভালো হলো রঙিন কাপড় ব্যবহার করা। ব্রিডিং এর সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপরের দিকে খোলা স্থান এবং দরোজার নেটে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ব্রিডিং এর সময় ঘরের তাপমাত্রা বারবার পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ঘরের বিষাক্ত গ্যাস বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। আবহাওয়া বিবেচনা করে গরম এবং শীতকালে পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে। গরমের সময় দিনে পর্দা উঠিয়ে এবং রাতে পর্দা দিতে হবে। শীতকালে যদি বেশি সময় কুয়াশা থাকে তাহলে মাঝে মাঝে পর্দা উঠিয়ে গ্যাস বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। আবহাওয়া এবং বাচ্চার বয়স বিবেচনা করে দিনে পর্দা খোলা এবং রাতে পর্দা নামানোর সময় নির্ধারণ করতে হবে। কোনভাবে ঘরের ভিতরে বিষাক্ত গ্যাস থাকতে দেওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত আলো বাতাসের সরবরাহ রাখতে হবে। আবার এমনও যেন না হয় আলো বাতাসের সরবরাহ করতে যেয়ে ঠান্ডায় মুরগি মারা না যায়। মূল কথা হলো অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া।

টিকা প্রদান ঃ
১) রেজিস্টার ভেটেনারিয়ান কর্তৃক ভ্যাকসিনেশনের সিডিউল তৈরি করা।
২) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক দিয়ে ভ্যাকসিন করানো।
৩) ভ্যাকসিন সংরক্ষণ এবং পরিবহনের সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪) ভ্যাকসিন প্রয়োগের পূর্বে ভ্যাকসিনের নাম, উৎপাদনের তারিখ মেয়াদ উর্ত্তীনের তারিখ, প্রয়োগ পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৫) কোল্ড চেইন মেইনটেইন করে এমন দোকান থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হবে-প্রয়োজনে সরাসরি কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে।
৬) পানিতে ভ্যাকসিন দিলে ননী বিহীন দুধ দিলে ভালো হয়।
৭) ঠান্ডা আবহাওয়া ভ্যাকসিনের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে লাসোটা ভ্যাকসিন কখনো সূর্যের আলোর উপস্থিতি দেওয়া যাবে না। করার উপযুক্ত সময় হল ভোরবেলা অথবা রাতে।
৮) ভ্যাকসিন করার ১২ ঘন্টা আগে পানিতে ক্লোরিন, বিøচিং পাউডার, এন্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট দেওয়া যাবে না।
৯) ভ্যাকসিনের সময় পানির পত্র বাড়াতে হবে।
১০) চোখে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় ড্রপারের উপর একটি কাপড় পেচিয়ে বরফের পানিতে ডুবিয়ে ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ড্রপারটি বরফের পানিতে ডুবাতে হবে।


Dr. Md. Mashudur Rahman

Techno commercial manager -AHN Division.

ROSSARI BIOTECH LTd.

Mob:01767 616310

This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.

?>