ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও তিন শতাধিক সদস্যের সরব উপস্থিতিতে গত ২৪ মে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা’ (ওয়াপসা-বিবি) -এর ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমান। সংগঠনকে গতিশীল করতে গঠনতন্ত্রে বেশ কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেন ওয়াপসা-বিবি সভাপতি।
তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার কলেবর বেড়েছে। বিশে^র সবচেয়ে বড় শাখার কৃতীত্ব এখন বাংলাদেশের কাছে। প্রত্যাশা বেড়েছে, সেই সাথে দায়িত্বও বেড়েছে বহুগুণ। ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাই যে সকল পদের প্রার্থীতার শর্ত হিসেবে বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, সে সব ক্ষেত্রে বয়স ৫ বছর কমানোর প্রস্তাব করেন মসিউর রহমান- যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তিনি বলেন, গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহ দিতে হবে। রিসার্চ গ্রান্টের সংখ্যা কিংবা গ্রান্টের পরিমাণ প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। শুধু রিসার্চ গ্রান্টই নয় পোল্ট্রি বিষয়ে নতুন কোনো উদ্ভাবন, আবিষ্কার কিংবা পোল্ট্রির আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকৃত দেয়া হবে এবং উদ্ভাবকদের পুরস্কৃত করা হবে। জনাব মসিউর বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সম্পর্ক আরও নিবিড় করা প্রয়োজন। দেশীয় গবেষণার মান বাড়াতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকদের সাথে যৌথ গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) নির্ভর হয়ে পড়েছে। রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আগাম সতর্কতা, Optimized Feeding Strategies, Environmental Control, এবং Data-driven Decision-making -এর ক্ষেত্রে AI Technology যথেষ্ঠ সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডিম সংগ্রহ, এমনকি খামার পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদনের ক্ষেত্রে রোবোটিকস টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। নিরাপদ ডিম-মাংস উৎপাদন, খরচ ও সময় সাশ্রয় করার স্বার্থে প্রযুক্তি নির্ভরতা থেকে দূরে সরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিজ্ঞানীদেরকেও বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে; তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালগুলোর সিলেবাসেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। জনাব মসিউর আরো বলেন, Longer-lasting Immunity এর জন্য ন্যানো পার্টিকেল-ভিত্তিক ভ্যাকসিন এবং লাইভ ভ্যাকসিন সহ নতুন ও উন্নত ভ্যাকসিনের গবেষণা দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকেও পিছিয়ে থাকলে চলবে না। তিনি বলেন, পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে ওয়াপসা’র সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট -এর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতায় Small scale poultry farming and development of women Entrepreneurship শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্যারাগন গ্রæপ, নারিশ গ্রæপ এবং ওয়াপসা-বিবি যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ক্ষুদ্র খামারিদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীকে পোল্ট্রি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্পাদিত কাজের বিবরণ তুলে ধরেন ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক ডা. বিপ্লব কুমার প্রামানিক। তিনি বলেন, ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন গবেষক কে রিসার্চ গ্রান্ট প্রদান করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ১২ জনকে দেয়ার। ২০২৪ সালের জন্য প্রস্তাবনা জমা পড়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে যাচাই-বাছাই শুরু হবে। জনাব বিপ্লব বলেন, ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক পোল্ট্রি কনফারেন্স’ আয়োজন করা হয়। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা কনফারেন্সের আয়োজক হতে চায়। এর পাশাপাশি ‘ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি কংগ্রেস’ এর জন্যও আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পোল্ট্রি কংগ্রেসের তারিখ হতে প্রায় ৪ বছর আগে আয়োজক হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করতে হয়। ২০২৬ সালে কানাডা’র টরেন্টোতে পরবর্তী কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ওয়াল্ড’স পোল্ট্রি কংগ্রেস এর আসর বসবে। এ সময়ের মধ্যেই আয়োজক হিসেবে আমরা আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো।
২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ওয়াপসা-বিবি’র কোষাধ্যক্ষ কৃষিবিদ মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমান। এর পাশাপাশি ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘১৪তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার’ পর্যন্ত গৃহীত কার্যক্রমের সম্ভাব্য বাজেটও উপস্থাপন করেন তিনি। উপস্থিত সদস্যবৃন্দ প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সম্মতি প্রদান করেন। জনাব ফয়েজ বলেন, সামনের দিনগুলোতে গবেষণা, দক্ষতা উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে ব্যয় বাড়বে; বিশেষত: গণমাধ্যমের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পোল্ট্রি বিজ্ঞান ও গবেষণা চ্যালেঞ্জসহ সার্বিকভাবে পোল্ট্রি খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ গণমাধ্যমের সহায়তায় নীতি-নির্ধারক ও সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে পোল্ট্রি রিপোর্টিং ফেলোশীপ, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।
২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় দুইটি নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়, যার একটি ‘বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক’ এবং দ্বিতীয়টি ‘প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক’। সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব দু’টি গৃহীত হয়।
First Vice-president (কৃষি বিশ^বিদ্যালয় হতে মনোনীত) ও Second Vice-president (গবেষণা প্রতিষ্ঠান/সংস্থা হতে মনোনীত)- পদ দু’টির ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থিতার আবেদন জমা পড়লে, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রার্থীকে নমিনেশন পেপার সংগ্রহ করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একাধারে ন্যূনতম ৪ বছরের সদস্য পদ, প্রার্থিতার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে কার্যনির্বাহী কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার সংরক্ষণ করবে।
উন্মুক্ত আলোচনায়, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সিরাজুল ইসলাম- পোল্ট্রি গবেষণায় বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। ডা. এসএমএফবি আব্দুস সবুর- ৫ সদস্যের একটি এডভাইজরি কমিটি এবং ডা. শাহাদাত হোসেন পারভেজ- কার্যনির্বাহী কমিটিতে এনজিও প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব করেন। বিএলআরআই -এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুর রশীদ- ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং’ কে অধিকতর গুরুত্ব প্রদানের অনুরোধ জানান।
ওয়াপসা-বিবি কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি ও বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সিরাজুল হক, সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, প্রমুখ।